এম.মনছুর আলম, চকরিয়া:

চকরিয়ায় ২০১৮ সালে অনুষ্টিতব্য এসএসসি পরীক্ষায় সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কিছু অসাধু শিক্ষকের কালো হাতের থাবায় ঝরে পড়েছিল দক্ষিণ চট্রগ্রামের অন্যতম শ্রেষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্টান  চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের এক মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবন।ওই শিক্ষার্থীর তার দীর্ঘ ১০ বছরের শিক্ষা ও পাঠদানের সাধনাকে আঘাত করে তার প্রতিভা ও মেধাকে আটকে রেখেছিল এক নোংরা চরিত্রের শিক্ষক।পুন:তদন্তে পরীক্ষায় অংশে নেয়া শিক্ষার্থীর রেজাল্টে গোল্ডেন এ+ আসায় ওই শিক্ষকের গোমর ফাঁস হয়ে যায়।

সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১৮সালের ১৭ফেব্রুয়ারী তারিখে সারা বাংলাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এসএসসি’র বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পরীক্ষা।উক্ত পরীক্ষায় কক্সবাজারের চকরিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয় চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের মেধাবী ছাত্রী তাওরিন তাসফিয়া তাসফি।মেধাবী এ ছাত্রী পরীক্ষায় সব প্রশ্নের উত্তর ভাল ভাবে খাতায় লিখে বাড়ি চলে যান।কিন্তু এসএসসি’র ফলাফলে চমৎকার কিছু ঘটবে,আত্মীয় স্বজন ও বাড়ির সবার মুখ উজ্জ্বল করবে এমনটাই আশা ছিল মেধাবী এ পরীক্ষার্থীর।গত ০৬ মে এসএসসি প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেল তার নাম পরীক্ষার ফেলের তালিকায়।এ ফলাফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবার নেমে আসে দু:খের বিষদের চাপ।সহপাঠী, পরিবার, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ বিশ্বাস করতে সবার অভাগ লেগেছে তাসফি ফেল করা নিয়ে।এদিকে এসএস সি পরীক্ষার ফলাফলের পর চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নুরুল আখের ও তাসফির পিতা মাষ্টার আমিনুল হক এ ফলাফল মেনে নিতে না পেরে তাঁরা চট্টগ্রাম বোডের সাথে যোগাযোগ করেন এবং খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেন। খাতা পুনঃনিরীক্ষণ করতে গিয়ে আসল রহস্যের উম্মোচন ঘটে।

চট্টগ্রাম বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারী চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পরীক্ষা ছিল। সেখানে ৩০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য ওএমআর ফরম পূরণ করতে দেয় কক্ষ পরিদর্শকগণ।পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা ও এমআর ফরম পূরণ করে কক্ষ পরিদর্শককে জমা দেন। কিন্তু দায়িত্বে থাকা চকরিয়া বিএমএস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাইছার উদ্দিন লিটন তাসফি’র ও এমআর ফরমটি পরিবর্তন করে আরেকটি ওএমআর ফরম ঐ শিক্ষক নিজে পূরণ করে হল সুপারকে জমা দেয়। এদিকে যখন ফলাফল ঘোষণা করা হয় তখন তাসফির নাম বা রোল নাম্বার কোথাও না পাওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার ফলাফল নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে। এক পর্যায়ে বিদ্যালয়ের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে গিয়ে চট্টগ্রাম বোর্ড কনভেইনার মৃণাল কান্তিকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

তদন্তের স্বার্থে গত ১৪ মে চকরিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে থাকা সকল কর্মকর্তাকে বোর্ডে তলব করেন। এদিকে তদন্তের একপর্যায়ে ওএমআর ফরমে কার স্বাক্ষর রয়েছে সেটি যাচাই-বাছাই করা হয়। যাচাই-বাছাই এ প্রমাণ হয় ওএমআর ফরমের স্বাক্ষরকারী হলেন চকরিয়া বিএমএস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাউছার উদ্দিন লিটনের।স্বাক্ষরটি শিক্ষক কাইছার উদ্দিন লিটন অস্বীকার করেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ওএমআর ফরমে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোর্ড কে লিখেছে তা প্রমাণ করার জন্য কোরক বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী তাসফিকে বোর্ডে হাজির করা হয়। তার লেখার সাথে ওএমআর ফরমের লেখা মিল না থাকায় পুন:রায় কাইছার উদ্দিন লিটনকে বোর্ডে হাজির করা হয়। অনেক্ষণ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় ওএমইর ফরমের লেখাটিও ঐ শিক্ষকের।

গত ১৬ মে তদন্ত কমিটি কাইছার উদ্দিন লিটনকে তলব করেন। তিনি তদন্ত কমিটির কাছে প্রথমে সত্য কথা অস্বীকার করলেও চূড়ান্ত তদন্তে কাইছার উদ্দিন লিটনকে দোষী প্রমাণিত করার পরে তিনি আসল কথা স্বীকার করে লিখিত স্ট্যাটমেন্ট দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ বিষয়ে বোর্ডে শৃঙ্খলা কমিটির জরুরী বৈঠক আহ্বান করেন। বৈঠকে কাইছার উদ্দিন লিটনের বিষয়ে বিধি মোতাবেক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

এনিয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান  মৃণাল কান্তির কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করেছি এবং প্রতিবেদনও দাখিল করেছি।  তিনি বলেন প্রতিবেদনে কাইছার উদ্দিন লিটনকে দোষী প্রমাণিত করা হয় এবং তার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বোর্ড কন্ট্রোলার মাহবুবুল হাসানের সাথে মোবাইলে (০৩১২৫৫৩১৪৫) জানতে চাইলে তিনি বলেন, চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী তাসপি যার রোল-১২২৪৮৭ সে সব বিষয়ে ৯৫% এর উপরে নাম্বার পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পরীক্ষায় সে অকৃতকার্য হয়। তিনি আরো বলেন- ঐ বিষয়ে ৩০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় দায়িত্বরত শিক্ষক কাইছার উদ্দিন লিটন তার ওএমআর আসল ফরমটি পরিবর্তন করে আরেকটি ওএমআর ফরম পূরণ করে জমা দেয়। একজন শিক্ষক যদি এধরনের আচরণ করে তাহলে অবশ্যই বোর্ড তার ব্যাপারে কোন পজেটিভ দিক বিবেচনা করবে না। তিনি বলেন- শীঘ্রই ঐ শিক্ষকের বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া কোরক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আখের বলেন, আমার শিক্ষকতার জীবনে আমি অনেক কিছু দেখেছি কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর সাথে একজন শিক্ষক এমন নোংরা আচরণ করতে পারে সেটি দেখি নাই। আমার ছাত্রী তাসফি’র কোনো ক্লাসে অকৃতকার্যের রেকর্ড নেই এবং প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে আসছে। কিন্তু তার ফলাফল দেখে আমি হতবাক হয়ে বোর্ডে ছুটে গিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, বোর্ড যথা সময়ে পুনঃনিরীক্ষা করে ফলাফল দিয়েছে। তিনি বলেন, পুনঃনিরীক্ষার ফলাফলে আরো দু’জন এ+ পেয়ে সর্বমোট ১০৫ জন হলো। তিনি বোর্ড কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।